ক্র্যাক প্লাটুন – অমিত গোস্বামি

তীব্র শোকে অগাস্ট যখন জাগে হাতে উঠে আসে আগুন বর্ণমালা
মহাবিশ্বের দৃশ্যেরা ছিঁড়ে যায় ছোবল শেখায় শহীদের কথামালা
দীর্ঘশ্বাসের মুখ কুয়াশায় ঢাকা মেঘবিষাদের শরীরে মৃত্যুদাগ
প্রহর ডুবেছে গোপন প্রত্নবিষে মুছে যাওয়া ওরা অনন্তে থাক

জুয়েল হাফিজ আজাদ বকর বদী
কোন একদিন আসতো ফিরে যদি
আরও কেউ কেউ শফী ইমাম রুমি
ওষ্ঠে আজান স্বাধীন জন্মভূমি

মনের গভীরে স্বাধীন মাতৃভুমি
স্বপ্ন ছুঁয়ে আলতাফ আছো তুমি
স্বার্থের নয় সাজানোর আজ পালা
হাতে তুলে নাও শহীদের কথামালা


অচীনপুরেঅমিত গোস্বামি / টিপু

বৃষ্টি পড়ে মনের ভেতর একফালি চাঁদ মেঘে ঢাঁকা

বৃষ্টি পড়ে চাঁদটা ছুঁয়ে মেঘের ফাঁকে আঁকাবাঁকা

বৃষ্টি ঝরে তোমার সুখে ঝরে পড়ে আমার বুকে

সুখ বয়ে যায় কোন সূদুরে বৃষ্টি পড়ে অচীনপুরে

 

আকাশ ঢাকা মেঘের সুরে তোমায় পেতে ইচ্ছে করে

অচীনপুরে আজকে যাবো বৃষ্টিকনায় তোমায় পাবো

 

বৃষ্টি মাঝে ভিজে ভিজে সেই যে এলে একাই নিজে

একফালি চাঁদ মেঘের ফাঁকে ভাবছে এমন প্রেমও থাকে


আকাশ কেন কাঁদে – মোস্তফা মাহমুদ

হাতটা বাড়ালেই অনেক আছে ভাবছো তুমি পূর্ণ

ভালোবাসার অংকে আমি তোমার কাছে শুন্য

একটু হলেও বুঝতে যদি আকাশ কেন কাঁদে

পূর্ণ চাঁদের শূন্যতাকে বুঝতে অনুবাদে

এমন করে বলছি বলে ভাবছো কথার কথা

চোখের নীলে খুঁজে দেখো কার জমেছে ব্যথা

একটু হলেও বুঝতে যদি আকাশ কেন কাঁদে

পূর্ণ চাঁদের শূন্যতাকে বুঝতে অনুবাদে

ভালোবেসে অবশেষে ঘর কি সবাই বাঁধে

নিঃস্ব হয়ে কেউবা সুখি কেউবা আবার কাঁদে

একটু হলেও বুঝতে যদি আকাশ কেন কাঁদে

পূর্ণ চাঁদের শূন্যতাকে বুঝতে অনুবাদে


আমি থাকি কইতাঞ্জিল রহমান

এক চোখেতে বৃষ্টি মাখি এক চোখে রোদ

এক হৃদয়ে শূন্য নদীর এক পাশে স্রোত

এক আমিতে একা আমি তবু একা নই

বুকের ভেতর তুমি থাকো আমি থাকি কই

এক আকাশের অনেক নীলে তুমি সাদা মেঘ

সেই মেঘেতেই স্বপ্ন বুনি জড়িয়ে আবেগ

স্বপ্নচারী হয়ে যখন একা পরে রই

বুকের ভেতর তুমি থাকো আমি থাকি কই

চাঁদটা  সাজে যেমন করে আকাশেরই টিপ

বিরান পথে তুমি যে আমার আশারই প্রদীপ

তোমার সুরে যখন গানের পাখি হয়ে রই

বুকের ভেতর তুমি থাকো আমি থাকি কই


ঝুম বৃষ্টি – মিল্টন হাসনাত

বুকের ভেতর জলের মত ছলকে পড়ছে শোক
চাইছি আমি আজ এখনই ঝুম বৃষ্টি হোক
মেঘের জলে মন যদি তোর হোতো মেঘের মত
আমার মত তুইও জলে ভাসতি অবিরত

*** হোক বৃষ্টি হোক বৃষ্টি হোকনা ঝুম বৃষ্টি
কুয়াশাতে যাকনা ভিজে যাযাবর দৃষ্টি

হৃদয় থেকে জলের মত ছলকে পড়ুক শোক
চাইছি আমি আজ এখনই ঝুম বৃষ্টি হোক

বৃষ্টি মানেই জানালাতে ডাগর দুটি চোখ
আলতা পায়ের নেইলপলিশে মাল্টিকালার নখ

জলের বুকে আঁকিবুকি ভাসছে অভিমান
মুছে দিতে চাইছে বুকে লেখা প্রিয় নাম

হাতের আঙুল জড়িয়ে থাকে অমাবশ্যার আকাশ
আঁধার কেন অমন করে আমার দিকে তাকাস
তোর দুটি চোখ খুঁড়েছিল কবর আমার জন্য
মানবী নয় তুই তো ছিলি এক বুনো অরণ্য


তোমাকেই ভালবাসি – অমিত গোস্বামি

বুকের ভেতরে যে সুর বেজেছে জানি না কি বলে তাকে

তোমাকে যখন দেখেছি প্রথম আলো রঙ বৈশাখে

এতটা কষ্ট এতটা গোপন এত ভার বুকে নিয়ে

বলেছিলে – তুমি পাশে থাকবে তো এমন আড়াল দিয়ে

জড়িয়ে রেখেছি বারে বারে গেছি যখনই ডেকেছ তুমি

ঘন হয়ে আসা প্রেম ভালবাসা আর যত দুষ্টুমি

সব পার করে রাত নির্ঝরে বলেছিলে – তবে আসি

এখনও যে তুমি বলোনি আমায় তোমাকেই ভালবাসি

 

আর কতভাবে বোঝাবো বলো তো কি আছে আমার মনে

সবাই কি পারে বলতে কথাটা নিবিড় সংগোপনে

তুমি বুঝে নিও আমায় জানিয়ো কতটা হৃদয় জুড়ে

তোমায় রেখেছি তারেও বেঁধেছি রাগ দরবারী সুরে

 

রাগে অনুরাগে মননে ও তাপে তুমি এসে বোসো পাশে

হাতে হাত রেখে থাকবো দুজনে সুরে ও সর্বনাশে

এভাবে জীবন কাটাবো দুজনে গ্রীস্ম বর্ষা এবং শীতে

সুখেরই স্বর্গ আমরা দুজনে গড়ে নেবো এ ধরণীতে


পরোয়ানা – অমিত গোস্বামি

প্রাণ যদি চায় চক্ষু নাচায় পাতা আজ ফের শুরু হত্যার হালখাতা

পথ পিচ্ছিল তীব্র গভীর আঠা আমার কপালে মৃত্যুফতোয়া সাঁটা

পারলে মারিস ধর্ম ইজারা কিনে আসবো জানিয়ে দেখা হবে অন্তিমে

দাবানল দাহে মৃত্যু হয় না ঠিকই প্রতিবাদে শুধু আমরা মরতে শিখি

 

চারিপাশে ত্রাস ভয়ের মশাল জ্বলে শোকে সন্তাপে মানুষ কি কথা বলে

অনেক কেঁদেছি যখন জেগেছি আজ যা হবার হোক রুখবো এ নৈরাজ

 

সময় এসেছে  পাল্টা জবাব দেবো কলমে অস্ত্রে ঘোরতর সন্দেহ

আকাশে টাঙাবো আজ থেকে একটানা মৌলবাদের ধ্বংসের পরোয়ানা


মা – অমিত গোস্বামি

সবার জীবন ব্যস্ততাময়, আমার জীবন মরুভুমি,

কেউ তো আসে না, কথাও হয় না, শুধু বসে দিন গুনি,

ঈদ যায় আসে, তোরা পরবাসে, সিমাই জর্দা রাঁধি,

শুন্য আসন, হু হু করে মন, একা শুধু আমি কাঁদি,

শুধু দোয়া করি খোদারই কাছে মুছে ফেলি কান্না,

রহম ঝরুক তোদের মাথায় আমি যে তোদের মা

মনে আছে তোর সেই ঈদ ভোর, বাবার হাতটি ধরে,

প্রথম নামাজ পড়েছিলি তুই ঈদগাহ চত্বরে

নতুন পাজামা, কুর্তা টুপিতে দারুন মানিয়েছিল

ফিরে মুঠি খুলে দেখিয়ে সালামী বলেছিলি – ওরা দিলো

আমি হেসে মরি, শুধু দোয়া করি – এই খুশি থাক না,

রহম ঝরুক তোদের মাথায় আমি যে তোদের মা

পরে বড় হয়ে বাবার ভয়ে গুটিয়ে ইজেল তুলি,

বলেছিলি – মা গো, তুমি বলো না গো বাবাকে খোলাখুলি

প্যারিসে আমার যাওয়া দরকার পেতে শিল্পের দাম,

তোর মুখ চেয়ে আমি মাথা খেয়ে বাবাকে বললাম,

বিদেশে অনেক যশ হলো তোর, বউ এলো, সালমা,

রহম ঝরুক তোদের মাথায় আমি যে তোদের মা

ভরা সুখ হাতে একদিন রাতে বলেছিলি চলে যাবো,

এদেশের থেকে সেদেশে অনেক সুযোগ সুবিধা পাবো,

বউ ছেলে নিয়ে তোর যাওয়া দেখে বাবা তোর চলে গেলো,

তুই কি জানিস কবরে শান্তি কতটা সে পেয়েছিলো,

আজকে আমার কেউ নেই আর আছে শুধু কান্না,

রহম ঝরুক তোদের মাথায় আমি যে তোদের মা