অভিমানী – অমিত গোস্বামী

তোর হৃদয়ে শুধুই আমার ছবি আমার বুকে অহংকারী তুই

মধ্যরাতের বিষন্ন রং দেখে তোর ছবিতে আদর করে শুই

মুহুর্তকাল থমকে ছিল গতি স্রোত থামিয়ে দাঁড়িয়েছিল পানি

ভালবাসায় হয় না পরিমিতি ভালোবাসা বড্ডো অভিমানী

প্রণয়পাশা কাজলকালো চোখে অচিরপ্রভা তোকেও দিত হানা

ভরাডুবির পরোয়ানার ভয়ে অমাবস্যায় প্রকাশ ছিল মানা

তবুও আমি পেরিয়েছিলাম নদী তোকে দেখে পূর্ণিমারই চাঁদ

তারও আগে সূর্যডোবা সাঁঝে ছোবল দিয়ে ভেঙেছিলাম বাঁধ


পিতা – অমিত গোস্বামী

কাঁদছি নাতো কাঁদবো কেনো ধুলোর কণা হয়তো হবে

উথালপাথাল জলের ধারা রগড়ে দিলেই চলে যাবে

কাঁদছি আমি কাঁদছি কেনো সত্যি তোমার জানতে হবে

সত্যি হল কাঁদছি আমি লক্ষ্যভেদের ব্যর্থতাতে

পিতা ঘুরছে তোমার হাজার ছেলে ক্রোধে শকুন দুচোখ রাখছে মেলে

তরল সিসা উগড়ে দেব তপ্ত কঠিন রক্তেরই রঙ লাল শুধু হয় হয়না রঙিন

একদিন ঠিক উগড়ে দেব সকল ঘৃণা লালচে চোখের সবটুকু যে ফুলকিনামা

আগুন আমার বুকের ভেতর চোখের ভেতর

আগুন নিয়েই কাটছে আমার সকল প্রহর

গোকুল ধামে আমার মতো বাড়ছে যারা প্রতিশোধের আগুন বুকে পুষছে তারা

আমার মতোই দিকহারা স্রেফ, নির্দেশনার

হয়নিতো শেষ দেশ সাজানো, স্বপ্নবোনার


দেশ ছাড় রাজাকার – অমিত গোস্বামী

 ছড়িয়ে যা বিষ যতোটা পারিস যা ছড়িয়ে হাহাকার

আমরা তবু বলেই যাবো – দেশ ছাড় রাজাকার

তোদের বিচার নাট্যশালায় ছুরি বোমা কাঁপে পাড়া

ইজ্জত নেওয়া হাতে লেগে আছে ভাইয়ের রক্তধারা

 ** নিখোঁজ শহীদ কবর পায় নি তোরাও না পাস চাই

পুড়িয়ে তোদের ফেললে ভাবছি কোথায় ফেলব ছাই

কিভাবে নরম হবে জ্বালাপোড়া উপশম ফোস্কার

আমরা এখনো চেঁচিয়ে বলবো – দেশ ছাড় রাজাকার

কত জননীর কোল খালি আজো স্বামীও ফেরে নি ঘরে

বুড়িগঙ্গায় লাশ ভেসে যায় দেখেছি একাত্তরে

আলতাফ গান গায় নি তো আর খায় নি তো ভাত আজাদ

খোদার কাছে অনেক করেছি নিয়মিত মোনাজাত

ধর্মের নামে উল্লাসধ্বনি খোদার আরশও কাঁপে

দেশে আজো তাই হানাহানি জারি রয়েছে তোদের পাপে

তিরিশ লক্ষ্য শহীদের স্মৃতি ভোলে নি বাংলাদেশ

রক্তবীজেরা ঝাড়ে বংশে একদিন হবে শেষ


তিস্তা – অমিত গোস্বামী

একটি হাতে থাকুক গোলাপ অন্য হাতে অস্ত্র থাক

দুহাত তুলে জানাও দাবী তিস্তা এবার এদেশ পাক

কলকাতাতে মিছিল বেরোক সবাই দাঁড়াক বারান্দায়

বৃষ্টি আসুক শহর জুড়ে তিস্তা যেন এদেশ পায়

অনেক সময় চলেই গেল কথায় শুধু মেঘের ছাই

বিষন্নতার মুখোস খোলো তিস্তা নিয়ে বিহিত চাই

বিহিত হবেই দিনবদলের সঙ্গে যখন অনেক লোক

চুল ঝাঁকিয়ে জানাও দাবী তিস্তা এবার আমার হোক

আজকে আসুক যতই বাধা রোদ ওঠাবো আরেকদিন

বাংলাদেশের জানলা খুলে তিস্তা নামুক বিরামহীন

অনেক হলো মন মানে না পাওনা যেন বুঝে পাই

আজকে সবাই মেলান গলা তিস্তা যে চাই তিস্তা চাই

চোখের পানি চোখ মানে না শোক মানে না গায়ের জোর

সবাই মিলে ছিনিয়ে নেব তিস্তা নদীর পানির তোড়

তোমার হাতের গোলাপ ফুলের অস্ত্রে না হয় কাঁটাই থাক

তিস্তা নিয়ে টালবাহানা নিপাত যে যাক নিপাত যাক


ভুল – অমিত গোস্বামী

ফেরার স্বপ্ন দেখেছি তোমার কাছে ভেবেছি এবার ঘর বেঁধে ফেলি আমি

পরিচয়হীন আঁধারেতে ফেলে রেখে তুমি নিশ্চুপ, আমি পশ্চাদগামী

তবুও পৃথিবী ভালবাসা নিয়ে বাঁচে এখন আমার বিষন্নতাই প্রিয়

মেঘ কেটে গিয়ে সূর্য উঠলে পরে আমাকে তোমার আপন করে নিও

নিশুতি রাতের নির্জনতার নিচে কবর খুঁড়েছি, কবরে দিয়েছি ফুল

যখনই দিয়েছি দুজনেই জেনে গেছি ভালবাসা ছিল ঐতিহাসিক ভুল

তুমিও বলেছো ফিরে যাও তাড়াতাড়ি অবেলার মেঘ আকাশে ডাকলে ভয়

ভয়ে সন্ত্রাসে ছুটতে ছুটতে আমি বুঝেছি তোমায়, তোমার অবক্ষয়


কদম ফুল – মোস্তফা মাহমুদ

বর্ষাকালের আকাশ যদি রোদের গল্প বলে

কথা দিলাম বর্ষা হবে আমার চোখের জলে

কথা দিলাম মন ভেজাবো ভালোবাসার আঁচে

কথা দিলাম তোমার প্রিয় কদম ফুলের কাছে

বৃষ্টি হয়ে রোদ তাড়াবো জলের আদর মেখো

ভেজা হাওয়ায় ছুঁয়ে যাবো জানলা খুলে রেখো

কথা দিলাম পথ রাঙাবো বর্ষা ঋতুর সাজে

কথা দিলাম তোমার প্রিয় কদম ফুলের কাছে

সন্ধ্যারাগে মেঘ উড়াবো বাজবে মেঘের মাদল

ভর দুপুরে ঠিক নামাবো অঝোর ধারার বাদল

কথা দিলাম আষাঢ় শ্রাবণ ঝরবে সকাল সাঁঝে

কথা দিলাম তোমার প্রিয় কদম ফুলের কাছে


ভালবাসা তুমি – অমিত গোস্বামী

ভালবাসা তুমি সুদূর শঙ্খচিলে অনেক দূরের নীলে

আজও মনে হয় না ভুল নয় হয়তো বা ডেকেছিলে

আমি তা বুঝিনি তোমায় খুঁজিনি তবু তুমি কথা দিলে

বুঝি ভালবেসেছিলে।

ভালবাসা তুমি অপাপবিদ্ধ চোখে এসেছো আমার বুকে

স্বপ্ন জড়ানো প্রথম ছোঁয়ার সুখে এসেছিলে হাসিমুখে

আমি তা বুঝিনি তোমায় খুঁজিনি তবু কথা দিয়েছিলে

বুঝি ভালবেসেছিলে

ভালবাসা আমি তোমার ছায়ায় এসে বুঝেছি তোমায় শেষে

এত প্রেম আর ভালবাসা দিয়ে গেলে অবিরাম নিঃশেষে

এই ভাল হল চোখ ছলোছলো বেঁচে আছি ভালবেসে

চলেছি দুজনে ভেসে


মাঝরাতে চাঁদ – টিপু

মাঝরাতে চাঁদ আলো জ্বেলে আছে শুধু তুমি নেই আর আমার পাশে

আকাশের নীল আঁধারে হারায়নি শুধু তুমি আকাশ আর ফিরে দ্যাখোনি

থেমে নেই সময় থেমে নেই পৃথিবী থামনি তুমি শুধু থেমে আছি আমি

আকাশের বুক চিরে আজও ঝরে জল সরোবরে ফোটে আজও রক্তকমল

শিশিরের জল আজও মেশে ঘাসে তুমি মিশে আছো শুধু দীর্ঘশ্বাসে

আজও তারা জাগে সুবিশাল আকাশে মেঘেদের ভেলা আজও ভাসে বাতাসে

সবকিছু আছে আগেরই মতন শুধু আসো না তুমি আর যখন তখন


রাতের তারা – অমিত গোস্বামী

রাতের তারা তোমায় ছাড়া বেশ তো ছিলাম এই ঢাকাতে

সাঁঝবিকেলে একাই এলে বললে যাবো তোমার সাথে

আঙুল ধরে খুঁজেছিলাম নিজের করে একটু আড়াল

অনেক দূরে সন্ধ্যে জুড়ে এল প্রথম বসন্ত কাল

চোখের বালি উপড়ে ঢালি মেহেদীরং মারুবেহাগ

কাঁচের চুড়ি ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টিধোয়া রাগ অনুরাগ

মুখোমুখি দু’কাপ কফি নিয়ে বসি ব্যালকনিতে

ঠোঁটের তিলে বলেছিলে ভয়টা কিসের হৃদয় দিতে

কিন্তু হৃদয় একাকী হয় যখন বল যাচ্ছি তবে
ফেরারী মন ঢেউয়ের মতন ভাবে কখন আমার হবে

ভীষন কঠিন সমস্তদিন একলা ঘরের বিষন্নতা

কোথায় থাকো লুকিয়ে রাখো নিজের সকল মনের কথা

বৃষ্টি হওয়া রাস্তা ধোয়া পেরিয়ে এলে আমার কাছে

বললে এসে স্নিগ্ধ হেসে এ মুখ দেখে পরাণ বাঁচে

রোজপাহারার রাতের তারার কথায় উঠে ফুটল আলো

বুকের ভিতর আমায় রেখে সন্ধ্যাকাশে প্রদীপ জ্বালো


হলুদ খাম – শাওন মাহমুদ / মোস্তফা মাহমুদ

একটা ছেলে একলা যখন মাথায় নিয়ে ঘাসের বালিশ

ঠিক তখনই একটা ভ্রমর কানে কানে করলো নালিশ

শঙ্খচিলের ডানা ছুঁয়ে পেজা পেজা মেঘের ভেলা

কোথায় তুমি কই হারালে রঙ হারালো বিকেল বেলা

দূরের পথিক পথ খুঁজে নেয় ঘরে ফেরার আছে তাড়া

একলা ছেলের মন ভালো নেয় পথ খুঁজে দেয় সন্ধ্যাতারা

আবীর রঙে রাঙিয়ে দিয়ে গল্প বলার সন্ধ্যা নামে

পেয়েছ কি পাওনি তুমি ভালবাসা হলুদ খামে

কার সুরেতে হৃদয় মাখা কোন গভীরে যাওয়া আসা

সূর্যডোবা আঁধারে তার যায়না বোঝা চোখের ভাষা