কৃষ্ণকলি – অমিত গোস্বামী
সকাল থেকে হিমেল হাওয়া নরম রোদের দলকাকলি
বাগান জুড়ে পাখির বেহাগ কেমন আছো কৃষ্ণকলি
তোমার দেশে ঝরছে বরফ গাছের পাতা ঝরে গেছে
পশম ছোঁয়ায় শরীর ঢেকো শীতেরও বয়স হয়েছে
সঙ্গী আমার রাতপিয়ানো সঙ্গী আমার দীপককলি
নিজের খেয়াল নিজেই রেখো ভাল থেকো কৃষ্ণকলি
দূরে কোথাও বৃন্দগানে চা’বাগানের দিনের শুরু
চার মিনিটের সুরের কাছে হৃদয় আমার দুরুদুরু
কেভেন্টাসের ছাদে দুজন মুখোমুখি বাতাস হিমে
ভুলেই গেছো হয়ত তুমি ফিরবে না আর দার্জিলিংয়ে
গরম চায়ে দিচ্ছি চুমুক কাচকুয়াশার পাখপাখালি
পাহাড় জুড়ে অরণ্যবান উল্টোদিকের চেয়ার খালি
দূর পাহাড়ে আকাশ জুড়ে শেষ বিকেলে আবীর খেলা
তোমাকে চাই বলেছিলাম শরীর জুড়ে আলোর মেলা
আলতাফ – অমিত গোস্বামী
তিরিশে অগাস্ট বুকভেজা একদিন শুষে নিয়েছিল মৃত্তিকা জমা ক্ষুদ
অসময়ে তুমি ছেড়ে গেছ হ্যামলিন তোমায় দেখেছি আলতাফ মাহমুদ
তুমি ছিলে কোন সম্মোহনের দূত পাক হানাদার আড়াল করেছে ক্ষত
তোমরা করেছ যুদ্ধটা অদ্ভুত মেঘের আড়ালে ইন্দ্রজিতের মত
আমরা কি জানি কী আছে লেখার শেষে সুদিন কি বেঁচে আছে পৃথিবীতে আর
আপাতত ভুল মুখোসের এই দেশে তোমাদের ফিরে আসা বড় দরকার
কাঁধে নিয়েছিলে আঘাতের গুরুভার বুলেটের গায়ে লিখেছিলে শিরোনাম
দুরন্ত প্রতিশোধ নিয়েছে স্বদেশ ইতিহাসে লেখা আছে তোমাদেরই নাম
আলপথ থেকে এসে শহিদ মিনার তোমায় দেখেছি আলতাফ মাহমুদ
জানিনা কোথায় তুমি কেমন আছো জানি না মুক্তি পেয়েছি না সব ঝুট
এখন এ’দেশ নিজ স্বভাবে হাঁটে যাপিত স্বপ্নে বাকি বহু অধিকার
একাত্তরের শহীদের বলিদান পেরেছি কি দিতে তোমাদের সম্মান
বড় একাকী – তাঞ্জিল রহমান
তোমার চুলে গেঁথে দিলাম জ্যোৎস্না ফুলের মালা
এবার তোমার অমানিশায় পথ দেখানোর পালা
ধ্রুবতারা তোমাকে দূর আকাশে রাখি
পথহারা এ আমি শুধু তোমাকে ডাকি
ভালোবাসা ডেকেছে মন ছুঁয়েছে নাকি
জেনেরেখো তুমিহীনা আমি বড় একাকী
বৃষ্টি কণা কপোলে তোমার ঝরে যখন পড়ে
একাকী আমি উদাসী ভিষন তোমাকে মনেকরে
আলো আঁধারি রাতে তুমি জ্যোৎস্না ছুঁয়েছো নাকি
জানোনি শুধু সেই আলোতে আমি লুটিয়ে থাকি
তুমি ভাসো পদ্মপাতায় জীবন নদীর জলে
আমি তখন ছন্নছাড়া মেঘ বিষাদের দলে
মেঘের গায়ে কাজলে আঁকি তোমার রঙিন স্মৃতি
নিঝুম রাতে তুমি আমার জোনাকি জ্বলা বাতি
তুমি ঠিক চলে এসো – মোস্তফা মাহমুদ
গত বর্ষার কামীনির ঝাঁপি এখনও রয়েছে তোলা
শরৎ শিশিরে মিশে গেছে ঘ্রাণ দৃষ্টির জানালা খোলা
মেঘেদের হাতে পাঠিয়েছি চিঠি হেমন্ত রঙে মেশো
এবারের শীতে নাহয় বসন্তে তুমি ঠিক চলে এসো
পূবেরই হাওয়া পশ্চিমে বায় ছন্দে মেলায় গান
আঁধারের পরে আলো আসবেই ভুলেই যাও অভিমান
তোমারই আশায় কেঁটেছে যামিনী গ্রীষ্ম জানে সে কথা
হেমন্ত আসে স্বপ্ন সাজিয়ে কি ভিষন আকুলতা
তুমি তো জানো না – অমিত গোস্বামী
রোদ জ্বলা কোন এক নিভৃত দুপুরে এসেছিলে তুমি একা ভরা রোদ্দুরে
বলেছিলে নিয়ে চোখে ম্লান জলকনা আকাশ যে নীল নয় তুমি কি জানো না
পারিনি পালটে দিতে আকাশের রঙ চেষ্টা করেছি তুমি এবারে বরং
অন্য আকাশে মেলো পরাজিত ডানা আকাশ যে নীল নয় তুমিও জানো না
তুমি চলে গেলে আমি রঙ তুলি নিয়ে পৃথিবীর গায়ে রঙ দিয়েছি চাপিয়ে
হয়ত অনেক দিন নেই দেখা শোনা এখন আকাশ নীল তুমি তো জানো না
পেরেছি পালটে দিতে আকাশের রঙ আকাশ মেনেছে তুমি এবারে বরং
আমার আকাশে মেলো পরিচিত ডানা আকাশ হয়েছে নীল নয় তুমি তো জানো না
জানি না কোথায় তুমি দূরে নাকি কাছে একবার যদি পারো দ্যাখো ফিরে এসে
তুমি যা চেয়েছো সেই নীল হোলো কি না আকাশ হয়েছে নীল তুমি তা জানো না
পেরেছি পালটে দিতে আকাশের রঙ আকাশ মেনেছে তুমি এবারে বরং
আমার আকাশে মেলো পরিচিত ডানা আকাশ হয়েছে নীল নয় তুমি তো জানো না
সুচিত্রা সেন – অমিত গোস্বামী
হলুদ শাড়ি বেশ খোলা চুল দিচ্ছে হাওয়া আঁচল জুড়ে
পাতার কুচি দু একটা ফুল তোমার মুখে আসল উড়ে
মেঘ আকাশে অবাক চোখে ভাবছে এমন সুন্দরী কে
ভাল করে চেয়ে দেখি আসছ তুমি আমার দিকে
অনেক সময় দাঁড় করিয়ে বললে – তবে কোথায় ছিলেন
নাম ভুলেছি তুমি নীরা না কি আমার সুচিত্রা সেন
ঝিরঝিরিয়ে বৃষ্টি এল জানলা খোলা দমকা বিকেল
ভিজল ছাঁটে খাট বিছানা তেলেভাজা চায়ের মিশেল
স্মৃতির কাপে উঠছে ধোঁয়া চাপা পড়ে যাচ্ছে গান
কান্নাগুলো মুঠোয় নিয়ে বললে সাহস কোথায় পান
আমায় তবে কেন অমন কবিতাতে সাজিয়েছিলেন
নাম ভুলেছি তুমি নীরা না কি আমার সুচিত্রা সেন
মেঘে মেঘে ঘুরছে হাওয়া ভেসে আসে পুরনো মুখ
আমি দেখি দিগন্তপার অজানা সুর অচেনা সুখ
গলায় বিষাদ ঢালছি আমি আনতে বেহাগ বাগেশ্রী ধুন
গানই পারে আনতে তোমায় গানই পারে করতে নিপুন
তাই যদি হয় আপনি কেন ভালবাসি বলেছিলেন
নাম ভুলেছি কে তুমি গো নীরা না কি সুচিত্রা সেন
স্টপ জেনোসাইড – অমিত গোস্বামী
সীমান্তে ফের মানুষের ঢল নামছে পিছমোড়া বিষ ঢেলে দিয়ে গেছে বৃশ্চিক
নাফ নদীজল পেরিয়ে আসতে হচ্ছে ওরাও মানুষ রাস্ট্রবিহীন নাগরিক
কড়া রোদ্দুরে পিঠ পেতে নিয়ে আমরাও কখনো স্বাগত কখনো বলছি জঙ্গি
কিন্তু যা কিছু ঘটছে সেটা তো ঘটছে বিপদে মানুষ মানুষেরই হয় সঙ্গী
মৃত্যুর ছায়া হাতের তালুতে রাতদিন আরাকান দেশে বসতি ধসেছে ধ্বংসে
রক্তের খোঁজে বুলেট ছুঁড়েছে সৈন্য রোহিঙ্গাদের মুছে দাও ঝাড়ে বংশে
আমরা মানুষ, ধমনীতে লাল রক্ত বইছে এখনো মানবিক স্রোতে বইছে
‘স্টপ জেনোসাইড’ শব্দে জহির রায়হান হুংকার দিতে এখনো এল না কই সে
ধর্ষিতা নারী নিপীড়িত শিশু হাঁটছে নীরব আর্তি অধিকার দাও বাঁচবার
শিশুটির মুখ ভেসে আসে দুঃস্বপ্নে ভেসে যাওয়া মুখ শরীর ভাসছে নিঃসাড়
একাত্তরের মতই মৃত্যুমিছিল আবার ফিরেছে স্বাধীন দেশের বৃত্তে
স্টপ জেনোসাইড মুক্তকন্ঠে বলছি আরাকান জুড়ে হত্যা সবই কি মিথ্যে
কেমন আছো তুমি – অমিত গোস্বামী
হয়ত তোমায় ছিল বলার কিছু ভেবেছিলাম বলবো সময়মত
বলতে গিয়ে আটকে গেছি আমি মেঘ ঢেলেছে বৃষ্টি অবিরত
বৃষ্টি কি আর আমার গোপনীয় ভাব বুঝেছে বুক ঢিপঢিপ কথা
বলেছে কি আমি যে তোমার সাথে পেরোতে চাই আগুন খরস্রোতা
ভালবাসি বলতে হবে কেন বরং কিছু না বলাটাই শ্রেয়
বলি নি তাই বুঝবে ভেবেছিলাম আমার কথা সহজ অনুমেয়
কুমারী রাগ অনুরাগের আলো বসলে একা মাতাল নদীর ধারে
ভালবাসি বলতে গিয়ে আমি বলেছিলাম সবাই কি সব পারে
না পারাটা হয়ত আমার ছিল আলোর থেকে সদ্য নেওয়া ছুটি
আমি প্রকাশ করতে গিয়ে দেখি ভাঙলে তুমি সকল প্রতিশ্রুতি
পারিনি থাক না পারাটা নিয়ে স্তব্ধ পাঁজর পাশ বিরান মরুভূমি
একটা কথা জানতে ইচ্ছে করে বহুদূরে কেমন আছো তুমি