______________________________________________________________________________

আমার কিসের ভয় – কবি মহাদেব সাহা

আমার পিছে মিথ্যেরা সব যতোই করুক ধাওয়া
আমার আছে অভয়মন্ত্র হৃদয় থেকে পাওয়া,
আমার আছে পদ্মানদীর বিশাল জলধারা
আমি কেন কাতর হবো, ভগ্ন দিশেহারা

আমার দিকে মিথ্যেরা সব যতোই তুলুক ফনা
আমার আছে প্রাণের মাঝে দেশের বন্দনা
আমার আছে মুক্ত আকাশ সিক্ত জলাশয়
আমি কেন মুখ লুকাবো আমার কীসের ভয়

আমায় নিয়ে মিথ্যেরা সব যতোই তুলুক ঝড়
আমার আছে হাজার নদীর উৎস নিরন্তর
আমার আছে মুক্তিযুদ্ধ ফেব্রুয়ারি মাস
আমার আছে ৭ই মার্চের অমর ইতিহাস

আমার দিকে মিথ্যেরা সব যতোই আসুক ধেয়ে
আমার আছে বাংলা ভাষা হৃদয়খানি ছেয়ে
আমার আছে নকশিকাঁথা, মধুর একতারা
আমি কেন কাতর হবো ভগ্ন দিশেহারা

______________________________________________________________________________

দুঃখ তোমার যত – মিল্টন হাসনাত

তোমার বুকে দুঃখ আমার রেখে একটুখানি কাঁদতে আমায় দিও

হাতের পাতায় দুঃখ তোমার যত একটুখানি ধরতে আমায় দিও

বুকের ভেতর তোমার জন্য কেউ রেখে গ্যাছে এক সমুদ্র ঢেউ

চেয়েছো কি জানতে কভু তাকে জড়ানো সে প্রেমের বাঁকে বাঁকে

 

হোক না জীবন যতই বিরাণভূমি  আমার সকল পথের শেষেই তুমি

চাইলে যেতে আমায় সাথে নিও হাতটা শুধু একটু ধরতে দিও

 

চাইলে তুমি আসবো আমি ফিরে সাত সমুদ্র তেরো নদী ঘুরে

হোক না সে পথ যতই এলোমেলো কিংবা আঁধার হোক না যতই কালো

______________________________________________________________________________

যাও নিয়ে যাও – মাহমুদ আকাশ

যাও নিয়ে যাও আমার যতো গান

যাও নিয়ে যাও উদাস অভিমান

তোমার হৃদয় আকাশ  আমায় নাইবা তুমি দিলে

পদ্মঝিলে পা ভিজিও একটু সময় পেলে

যতন করে ভুলে যেও জেগে  থাকা  রাতের কথা

তারার মেলায় উড়িয়ে দিও মুঠো মুঠো নীরবতা

রইবো আমি  একা  একাই  নাইবা তুমি এলে

জোনাক রাতে আকাশ দেখো  একটু সময় পেলে

 

সুখ পাখিকে বলে দিও পাল্টে নিতে পথের রেখা

হিমেল হাওয়ায় ভাসিয়ে দিও  স্মৃতি নামের বিষাদ গাঁথা

হাঁটবো  আমি  একা একাই নাইবা তুমি এলে

পথের শেষে পেছন ফিরো একটু মনে হলে

 

মুছে  দিও ভুলে যেও ফেলে  আসা  মুখরতা

অশ্রু আমার বিষাদ নদী তোমার নামে হয় বহতা

কাঁদবো আমি  একা একাই নাইবা মুছে দিলে

বৃষ্টি এলো জানলা খুলো একটু মনে হলে

______________________________________________________________________________

নিরুদ্দেশ – অমিত গোস্বামী 

স্বপ্ন আমার একলা ঘোরে মনের উঠোন জুড়ে

সঙ্গী আমার ভেজা আকাশ মেঘ আসে উড়ে

দিন চলেছে দিনের মত  সামনে শহরতলি

সুযোগ হলে একটা কথা ইচ্ছে হলো বলি

আমার বুকে শব্দ কাঁদে  শব্দ তোমায় বাসে

ভীষন ভাল যেমন আকাশ বৃষ্টি নিয়ে আসে

সময় কখন কাটল কোথায় বোঝার আগেই শেষ

রাতের কালো আমার মনে  আলো নিরুদ্দেশ

 

হৃদয় আমার পুড়ছে এখন  হচ্ছে পুড়ে ছাই

বেঁচে থাকার সাহস তবু তোমার কাছে পাই

পুড়ে গিয়েই নাহয় আমি খাঁটি হৃদয় নিয়ে

তোমার কাছে হাজির হব সবকিছু হারিয়ে

 

তোমার মুখে সৃষ্টি সুখের বৃষ্টি পাহাড়জুড়ে

সমস্ত রাত গান শোনাত ইমন রাগের সুরে

থামিয়ে দিলে সে সুখ আমার হৃদয় মরুভূমি

নিভে গেল প্রদীপ আমার হারিয়ে গেলে তুমি

______________________________________________________________________________

নস্টালজিয়া – অমিত গোস্বামী

পলাশ বকুল ঘেরা খেলার মাঠ

সবাই মিলে খেলার ব্যাকুলতা

বন্ধু তোরা কেমন আছিস সব

মনে  কি আছে সেসব দিনের কথা

দূরে সরেছি আমরা সকলেই কেউ এদেশে কেউ বিদেশে থাকি

দেখা হলে কেমন আছিস ভাই সযত্নে তার ফোন নম্বর রাখি

তারপরে ফের কাজের কোলাহলে সব ভুলে যাই গড়িয়ে চলে দিন

স্মৃতির ঝলক হঠাত মনে আসে আমরা মানুষ এমনই মসৃণ

 

বাদল একা স্কুল আসত হেঁটে বলেছিলাম – বাবা কোথায় তোর

বলেছিলো – তাকে কোথায় পাবো আমার বাবা স্বাধীন একাত্তর

পড়াশুনায় ভীষন ভাল ছিল সারেক আতিক লতিফ মিলটন

ওরা এখন অনেক বড় কেউ আমি একাই গাইছি শুধু গান

 

স্কুলের পাঁচিল টপকে ওপার মাঠ যেতেই হাতে কে যেন কী দিলো

মুঠো খুলে দেখি গোলাপ ফুল মেয়েটি আমার বন্ধু হয়েছিল

ভিকি নুন এর শাওন মাহমুদ গানের টানে আসত মাঝেসাঝে

বন্ধু থেকে আমার বধু হল অনেকদিনই আছে বুকের মাঝে

______________________________________________________________________________

রঙিন শাড়ী – সোনিয়া স্নিগ্ধা

রঙিন শাড়ী মেঘের বাড়ী তোমার সাথে আমার আড়ি

সবুজ পাহাড় সারি সারি  অভিমানেই সাগর পাড়ি

ভীষণ চেনা পথটা ছেড়ে অচেনা কোন পথের ধারে

ভাবনা জুড়ে মাতাল হাওয়া

তোমার আশাতে পথ চাওয়া

 

দুর পাহাড়ের ওই বনানী  আমায় সেথা কেউ চেনেনি

ফিরছি আবার চেনাপথে  ভালোবাসা নিয়ে সাথে

কল্পনাতে রঙিন ঘুড়ি দূরের আকাশ দেয় যে পাড়ি

 

অভিমানের সেই যে সে ভুল আজকে ব্যাকুল আমায় করছে

প্রেম সেতো নয় ভালোবাসা ভালবেসেই কাছে আসা

ফিরবো আবার সেই সে পথে যেথায় তুমি ছিলে সাথে

______________________________________________________________________________

সুরের বরপুত্র – লুৎফর রহমান রিটন

একাত্তরের রক্ত স্রোতে তোমার নামের দ্যুতি

তোমার সুরের ইন্দ্রজালে মুগ্ধ আমার শ্রুতি

অষ্টপ্রহর তুমি আমার কষ্ট হয়ে বাজো

হও না অতীত কী আধুনিক সমসাময়িক আজও

তোমার রক্ত অগ্নিমশাল তাই জাগিয়ে রাখে

আমার মনন আমার মেধা আমার চেতনাকে

ক্রান্তিকালের দৃপ্ত সাহস হে প্রিয় কান্ডারী

“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী আমি কি ভুলিতে পারি

ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু গড়ায়ে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি”

 

অপূর্ব সিম্ফনি তোমার অমর একুশের গীত

রক্তে জাগায় কি শিহরণ সুরের ইদ্রজিৎ

তোমার সুরে আকাশ জুড়ে মুক্তো রাশি রাশি

বাংলা মায়ের অমূল্য ধন তোমার মোহন বাঁশী

স্বাধীন বাংলা সোনার বাংলা ধন্য তোমার দানে

একটি জাতি উজ্জীবিত তোমার একটি গানে

রক্তে লেখা নামটি তোমার দীপ্ত অবিনাশী

“আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি

চিরদিন তোমার আকাশ তোমার বাতাস আমার প্রানে

ওমা আমার প্রানে বাজায় বাঁশি সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি”

______________________________________________________________________________

টিটোর স্বাধীনতা – অমিত গোস্বামী 

মনের মাঝে ঘুরে বেড়াস  দূরে থেকেও পাশে

তোর কবরে রোদ পড়েছে সবুজ কচি ঘাসে

চোদ্দ বছর বয়েস ছিল যখন এলি কাছে

মুক্তিকামী  কিশোর টিটো আমার পাশে পাশে

বারেবারে যুদ্ধে যাওয়ার আগুন প্রবণতা

সেদিন ছিল সাভার জুড়ে শত্রু আসার কথা

আমরা ছিলাম মধ্যমাতে  ডাইনে বাঁয়ে আরো

কেন যে তুই দৌড়ে গেলি ডাক না শুনে কারো

 

হানাদারের বৃষ্টি বুলেট বিঁধল বুকের মাঝে

শহীদ হলি টিটো আমার স্পষ্ট  মনে আছে

কেউ ফেরাতে পারেনি আর মৃত্যু খরস্রোতা 

শেষ কথাটা বলেছিলি দেখব স্বাধীনতা

 

স্বাধীন দেশের শহীদ টিটো আমার যত আদর

দিয়ে ঢেকে দিলাম তোকে স্বাধীনতার চাদর

দেশ পেয়েছে স্বাধীনতা পায় নি তোকে আর

তোকে ভেবেই কাঁদে রে তোর বাচ্চু কমান্ডার